আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার পরও দেশে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারের পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সীমান্ত থেকে মোবাইল ফোনে। তাই প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম পরিবর্তন হয়। সীমান্তে আমদানিকারক পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশীয় বাজারে দামে প্রভাব পড়বে না।
তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিমত, খাতুনগঞ্জে আড়তদারদের মধ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে। সীমান্তের আমদানিকারক ও আড়তদার সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় করতে আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ১০ শতাংশ হতে কমিয়ে শূন্য করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে পেঁয়াজ আমদানির ওপর কোনো প্রকার শুল্ক ও কর থাকল না। বছরের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে দাম বাড়া শুরু হয়েছে, যা এখনো বাড়ছে।
বুধবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে আরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পরও বাজারে দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাজারে পাকিস্তানি ও মিশরীয় পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০/৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে নেই।
শুল্ক প্রত্যাহারের পরও কেনা পেঁয়াজের দাম কমছে না জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, সীমান্তে বাজার দর বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কমিশনে বিক্রি করি। আমদানিকারকরা দাম না কমালে আমাদের কিছু করার নেই। আগামী ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জে প্রায় তিন শতাধিক পেঁয়াজের আড়তদার ব্যবসায়ী রয়েছে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে প্রতিটি আড়ত পেঁয়াজ, রসুনে ভরা। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, তারপরও দাম কমছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পণ্য কমিশনে বাণিজ্যের মধ্যে ব্যাপক অনিয়মের সুযোগ রয়েছে। এতে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। খাতুনগঞ্জে তথা চট্টগ্রামে পেঁয়াজের কোনো আমদানিকারক নেই। সীমান্ত থেকে আমদানিকারকরা সরবরাহ করেন।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, বাজারে পেঁয়াজসহ কিছু ভোগ্যপণ্যে কমিশন বাণিজ্য হচ্ছে। কমিশন বাণিজ্য পণ্যের দামে কারসাজির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। দাম কমাতে হলে কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা প্রয়োজন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আগামী দেড় মাস পর মুড়ি পেঁয়াজ ও ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দেশীয় উত্পাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসবে। চট্টগ্রামে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ৭৮ হেক্টরের মতো জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। আবহাওয়াগত কারণে চট্টগ্রামে পেঁয়াজের চাষ বাড়ানো যাচ্ছে না।
খুলনা গেজেট/এইচ